আগামী ১৫জুন নির্বাচন, চুলচেরা বিশ্লেষণ করে হিসাব মিলাচ্ছেন ভোটাররা

আগামী ১৫জুন নির্বাচন, চুলচেরা বিশ্লেষণ করে হিসাব মিলাচ্ছেন ভোটাররা

এম দুলাল আহাম্মদ,খাগড়াছড়ি:
খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার গুইমারা  উপজেলা পরিষদ নির্বাচন আগামী ১৫জুন।বিপুল উৎসাহ উদ্দিপনার মধ্যদিয়ে মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছেন প্রার্থীরা।বাছাই এবং প্রত্যাহার পর্ব শেষে,চেয়ারম্যান পদে চারজন,ভাইস চেয়ারম্যান পুরুষ পদে চারজন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে দুইজনসহ সর্বমোট ১০ প্রার্র্থী প্রতিদন্ধিতার মাঠে লড়াইয়ে নেমেছেন।চেয়ারম্যান পদে হলেন,বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনীত গুইমারা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মেমং মারমা ,স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান উশ্যেপ্রু মারমা,আইয়ুব আলী, রইসাঅং মারমা।ভাইস চেয়ারম্যান পদে ইফতেখার  উদ্দিন চেšধুরী পলাশ,ফখরুল ইসলাম লিটন,কংজরী মারমা, মানেরন্দ্র ত্রিপুরা,মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে হচ্ছে বর্তমান মহিলা ভাইসচেয়ারম্যান ঝর্ণা ত্রিপুরা এবং ফাতেমা বেগম।

প্রতিদন্ধিতার মাঠে প্রার্থীরা তাঁদের স্বপক্ষে জনগনের সমর্থন আদায়ে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন।ভোটারদের দুয়ারে দুয়ারে ছুটছেন  প্রার্থীরা।ঝাঁপিয়ে পড়েছেন সাধারণ মানুষের মন জয়ের লক্ষে।নাওয়া-খাওয়া ভুলে গভীর রাত পর্যন্ত গণসংযোগ এবং  গ্রামের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারদের সাথে উঠান বৈঠকে মিলিত হচ্ছেন।অনেকেই প্রচার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুককে।প্রচার প্রচারনায় সরগরম হয়ে উঠেছে গুইমারা উপজেলার সর্বত্র।চায়ের দোকান থেকে শুরুকরে মাঠে ময়দানে এখন নির্বাচনের আমেজ।পোষ্টারে পোষ্টারে ছেয়ে গেছে নির্বাচনী এলাকার গুরুত্বপূর্ন স্থান,দোকান পাট।ভোটাররাও উপভোগ করছেন সম্ভাব্য প্রার্থীদের পদচারণা। দিনক্ষণ যতই ঘনিয়ে আসছে নির্বাচনের ভোটের মাঠের দৃশ্যপট ততই বদলে যাচ্ছে,বদলে যাচ্ছে ভোটের হিসাব-নিকাশও।কঠিন সমীকরণ হচ্ছে,মারমা,ত্রিপুরা,চাকমা এবং বাঙ্গালী অধ্যুষিত এ উপজেলার ভোটের মাঠ।বিশেষ করে চেয়ারম্যান পদে ৪ প্রার্থীর মধ্যে ৩ প্রার্থী-ই মারমা,একজন বাঙ্গালী আওয়ামলীগের বিদ্রোহী।জাতীয় রাজনৈতিক দল,উপজাতীয় আঞ্চলিক দল ও স্থানীয় ভাবে ব্যক্তি ইমেজ এবং পাহাড়ী-বাঙ্গালী মেরুকরণ কাজে লাগিয়ে প্রার্থীরা বিজয়ী হতে চালাচ্ছেন বিরামহীন নির্বাচনী কর্মযজ্ঞ।উপজেলাকে আধুনিকায়ন করণের ফিরিস্তি তুলে ধরছেন ভোটারদের কাছে।ভোটাররাও প্রার্থীদের নিয়ে করছেন চুলচেরা বিশ্লেষণ।তবে প্রার্থীদের বিগতদিনের কর্মকান্ড এবং বর্তমানে নির্বাচনের মাঠে দেওয়া প্রতিশ্রুতির হিসাব মিলাচ্ছেন ভোটাররা।কার হাতে উপজেলা দায়িত্ব তুলে দিলে আধুনিক উপজেলা রূপান্তরসহ  জনগন উপকৃত হবে সেই বিচার বিশ্লেষণ করেই ভোটাররা নির্ধারণ করবেন তাদের অভিভাবক।এমনটাই বলছেন ভোটাররা।

ভোটারগন জানান,প্রতিদন্ধি প্রার্থীদের নিয়ে পর্যবেক্ষন করছেন তাঁরা।সকল সময় যে,প্রার্থীকে মানুষ কাছে পাবেন এবং সৎ,যোগ্য,আত্বীয়করণ মুক্ত থাকবেন তাকেই মানুষ ভোট দিয়ে বিজয়ী করবেন এমনটাই আশা করছেন সচেতন ভোটাররা।সরেজমিনে ভোটারদের সাথে কথা বলে জানা যায়,আচার-আচরণ,ব্যক্তি যোগ্যতা ও সততাকে প্রাধান্য দিচ্ছেন তাঁরা।এলাকার উন্নয়ন ও শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখতে পারেন এবং উন্নয়নের গতি অব্যাহত রাখতে পারবেন এমন প্রার্থীকে ভোট দিবেন তাঁরা।তবে কৌশলী এসব ভোটাররা সহজেই প্রকাশ্যে কোন প্রার্থীর পক্ষে সমর্থন দিচ্ছেন না।

চেয়ারম্যান পদে,
এবার সরকারী দলের প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীক নিয়ে মাঠে লড়াই করছেন আধুনিক গুইমারা গড়ার অন্যতম রূপকার,দুইবারের সাবেক সফল ইউ,পি চেয়ারম্যান,সকলের কাছে প্রিয় এবং পরিক্ষীত আস্থাভাজন একজন মানুষ,গুইমারা উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মেমং মারমা।তাঁর হাত ধরেই বাস্তবায়িত হয়েছে গুইমারা ইউনিয়ন পরিষদের আধুনিক ভবন।যেটি,বর্তমানে উপজেলা পরিষদ হিসেবে ব্যাবহার হচ্ছে।দলীয় নেতাকর্মী ছাড়াও রাজনৈতিক ক্লিন ইমেজের কারণে তিনি সাধারণ মানুষের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়।দলীয় ভোট ব্যাংক এবং ব্যক্তি ইমেজের কারণে সকল সম্প্রদায়ে ভোট রয়েছে তাঁর।বিদ্রোহী প্রার্থী থাকলেও বিগত দিনের কর্মকান্ডকে মুল্যায়ন করে  উপজেলা উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে এবং উপজেলাকে আধুনিকায়ন করতে,এবারের নির্বাচনে জনগন নৌকা প্রতীকে ভোটদিয়ে মেমং মারমাকে বিজয়ী করবে এমনটাই প্রত্যাশা করছেন তাঁর কর্মীরা।
তাঁর কর্মীরা বলেন,ভোটারদের স্বতঃস্ফূর্ত সাড়া পাচ্ছি।ভোটারদের স্বপ্রণোদিত অংশগ্রহণই বলে দিচ্ছে নৌকার জোয়াড় উঠেছে।জয়ের ব্যাপারে আমরা শতভাগ আশাবাদী।

উশ্যেপ্রু মারমা,তিনি বর্তমান উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান।তিনি হাফছড়ি ইউ,পির  চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।তাঁর দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা এবং ব্যাপক পরিচিতি থাকলেও গত ৫ বছরে তার আমলে উপজেলার কাঙ্খিত উন্নয়ন না হওয়ায় ভোটারদের মাঝে রয়েছে অসন্তোষ।ফলে,জনগণের বিরাগভাজন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে তাঁর।তবে উপজোতীয় আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলের সমর্থন থাকায় ভোটের মাঠে লড়াইয়ে আভাস পাওয়া গেছে।সহজেই হাল ছাড়ছেন না,এমন মন্তব্য করেন তার সমর্থিত ভোটাররা।

রইসাঅং মারমা তিনি নির্বাচনের ময়দানে একেবারেই নতুন।একজন স্কুল শিক্ষক হিসেবে পরিচিত রাজনৈতিকভাবে তিনি তেমন পরিচিত নয়।তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) রাজনীতির সাথে জড়িত।গুইমারা উপজেলা বিএনপির কমিটিতে একটি পদে রয়েছেন তিনি।স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী মাঠে প্রচারণা চালাচ্ছেন তিনি।তার শিক্ষকতার কারণে তিনি সিন্ধুকছড়ি ইউনিয়নে ভোটের মাঠে  কিছুটা প্রভাব ফেলতে পারে বলে গুঞ্জন রয়েছে।ভোটের মাঠে প্রাণ ফেরার সম্ভাবনার কথা মাঠে ঘুরে বেড়ানোর অপর কারণটি হচ্ছে,আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল ইউপিএফের কেন্দ্রীয় নেতা তার ছোট ভাই। তার মাধ্যমে ভোটারগন প্রভাবিত হতে পারে। তবে তিনি কোন দল অথবা ব্যাক্তির পরিচয় দিচ্ছে না। অত্যান্ত সাদাসিধেভাবেই চলাচ্ছেন নির্বাচনী প্রচারনা। তিনি  শিক্ষিত ও যোগ্য হিসেবে  ভোটের মাধ্যমে বিজয়ী হবেন বলে আশা করছেন।

আইয়ুব আলী,হাফছড়ি ইউ,পির সাবেক মেম্বার,তিনি গুইমারা উপজেলার একজন পরিচিত রাজনৈতিক ব্যাক্তি। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের গুইমারা উপজেলার নেতা। গত কাউন্সিলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে প্রার্থী হয়েছিলেন।ঐ কাউন্সিলে ভোট ছাড়া তাকে সিনিয়র সহ-সভাপতি ঘোষণা করা হয়।কিন্তু কমিটিতে তাকে সিনিয়র সহ-সভাপতি না দেওয়ায় দলের বিদ্রোহী হয়ে গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করেন তিনি।এবারের উপজেলা নির্বাচনেও দলের বিদ্রোহী হয়ে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনের মাঠে আছেন।পাহাড়ি-বাঙালী সমীকরণের কারণে ভোটের মাঠে ব্যাপক প্রভাব ফেলার সম্ভাবণা দেখছেন তাঁর সমর্থিতরা।৩ জন মারমা প্রার্থীর বিপরীতে ১ জন বাঙালী প্রার্থী এ সরল সমীকরণটি বাকী ৩ প্রার্থীর জন্য কঠিন হতে পারে বলে ভোটের মাঠে প্রচারণা  সরগরম। গত ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে বাঙালীদের সিংহভাগ ভোট পড়ে আইয়ুব আলীর পক্ষে। সে হিসেব ধরেই এগিয়ে যাচ্ছে তার সমর্থকরা। নিরব ভোট বিপ্লবের মাধ্যমে জয়লাভের আশায় বুক বাধছেন আইয়ুব আলী শিবির।

উল্লেখ্য,গুইমারাবাসীর প্রাণের দাবীর প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রীর সদিচ্ছা অনুয়ারী ২০১৫ সালের ২রা জুন সচিবালয়ে সরকারের প্রশাসনিক পুনঃবিন্যাস সম্পর্কিত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি’র (নিকার) খাগড়াছড়ির গুইমারা ইউনিয়নকে উপজেলায় রূপান্তর করার ঘোষণা দেওয়া হয়। এতে জেলার রামগড় উপজেলার হাফছড়ি, মহালছড়ি উপজেলার সিন্দুকছড়ি ও মাটিরাঙ্গা উপজেলার গুইমারা ইউনিয়ন নিয়ে নবসৃষ্ট গুইমারা উপজেলা গঠিত হয়। সর্বশেষ গুইমারাকে নিয়ে খাগড়াছড়ির উপজেলার সংখ্যা দাঁড়ায় ৯টি। এ উপজেলার ভোটর সংখ্যা ৩৩১৫৭।দ্বিতীয় বারের মতো আগামী ১৫জুন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

 

আপনি আরও পড়তে পারেন